প্রবন্ধ রচনা: দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা।
দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা
অথবা
গ্রাম উন্নয়নে ছাত্র সমাজের ভূমিকা।
অথবা
সমাজ উন্নয়নের ছাত্র সমাজের ভূমিকা।
সমাজ উন্নয়নে ছাত্র সমাজের ভূমিকা। |
ভূমিকা
তারুণ্যদীপ্ত ছাত্রসমাজ জাতির প্রাণ সম্পদ। তারা অসীম শক্তি ও সম্ভাবনার প্রতীক। আজ যারা ছাত্র তারাই জাতির আগামী দিনের কর্ণধার। দেশকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার দায়িত্ব একদিন তাদের উপরই বর্তাবে। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী বলেন- "the students are the future leaders of the country who could fulfil country's hope's being capable." অর্থাৎ ছাত্ররা হলো দেশের ভবিষ্যৎ নেতা যারা সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের আশা-কাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।
ছাত্র সমাজের কৃতিত্বপূর্ণ অবদান
ছাত্ররা বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজা অংশগ্রহণ করে থাকে। যুগে যুগে ছাত্রসমাজের ইতিহাসে রয়েছে এর উজ্জ্বল স্বাক্ষর। সমাজের অন্যায় অসত্য ও প্রবঞ্চনার বিরুদ্ধে তাদের চিরন্তন সংগ্রাম। আমাদের গৌরবময় ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এমনকি ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও এদেশের ছাত্রসমাজের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও ভূমিকার কারণেই উক্ত আন্দোলনগুলো সফল হয়েছে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক পটোপরিবর্তনে ছাত্রসমাজ বরাবর অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। জাতির কাছে ছাত্রদের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে।
গ্রাম উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা
আমাদের বাংলাদেশ গ্রামকেন্দ্রিক।এই গ্রামকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এদেশের সভ্যতা ও সংস্কৃতি। কাজেই দেশের উন্নয়ন বলতে গ্রামের উন্নয়নকেই বোঝায়। আমাদের জাতীয় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হলে জাতীয় জীবনের প্রধান কেন্দ্র পল্লীর প্রতি সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। পল্লীবহুল বাংলার গঠনমূলক কাজে ছাত্র সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশের গ্রাম সমূহের অবস্থা
বাংলাদেশের গ্রামগুলো এখনো অশিক্ষা-কুশিক্ষা, সংকীর্ণতা, কুসংস্কার, ব্যাধি এবং দারিদ্রোতায় পরিপূর্ণ। হাজারো সমস্যার আবর্তে বিভ্রান্ত গ্রামবাসী সুযোগ পেলেই গ্রামের মায়া ত্যাগ করে শহরের দিকে ধাবিত হয়। তাই একদিকে শহরগুলো যেমন ক্রমশ ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে, তেমনি অন্যদিকে গ্রামগুলো দুর্দশার অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে।
গ্রাম উন্নয়নের ছাত্র সমাজের ভূমিকা
গ্রামের দুর্দশা প্রসঙ্গে কবি আক্ষেপ করে বলেন-
"এইসব মূঢ় মুক মুখে দিতে হবে ভাষা
এইসব শুষ্ক ভগ্ন বুকে ধ্বনিয়া তুলিতে হবে আশা"।
সত্যিই গ্রামের মানুষের মুখে ভাষা ফোটাতে হবে। তাদের শুষ্ক ভগ্ন বুকে আসা উদ্দীপনার স্রোত বইয়ে দিতে হবে। বর্তমানে গ্রামের এই দুর্দশা মোচনে ছাত্রসমাজ যতটা সহজে এগিয়ে আসতে পারে, অন্য কারো পক্ষে ততটা সম্ভব নয়। কাজেই গ্রামের উন্নয়ন তথা জাতীয় উন্নয়নের ছাত্র সমাজ অংশগ্রহণ করে দেশ গঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে।
শিক্ষার প্রসার
গ্রামের অধিকাংশ মানুষ এখনো অজ্ঞ। নিজেদের ভালো-মন্দ সম্পর্কে বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। গ্রামের মানুষকে সচেতন করে তাদের জীবনে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে ছাত্র সমাজ দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারে। ছাত্র সমাজই পারে কুসংস্কার ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে বয়স্ক শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে। শিক্ষা বিস্তারে ছাত্রসমাজ সরাসরি অবদান রাখার জন্য স্বেচ্ছাশ্রমে অংশগ্রহণ করতে পারে, নাশ্য বিদ্যালয়ের শিক্ষাদান করতে পারে। ক্লাব বা সমিতি প্রতিষ্ঠা করে তারা গণশিক্ষা আন্দোলনের সম্পৃক্ত হতে পারে। পরীক্ষা পরবর্তী দীর্ঘশ্বরিতে তারা গ্রামে নিরক্ষর মানুষের মধ্যেও সাক্ষরতার আলো ছড়িয়ে দিতে পারে।
কৃষি উন্নয়ন
গ্রামগুলো কৃষি প্রধান অঞ্চল। কৃষির উন্নয়ন হলে গ্রামের উন্নতি বিধান সম্ভব হবে। আমাদের দেশে কৃষি ক্ষেত্রে এখনো প্রাচীন যুগের চাষ প্রণালী বিদ্যমান। কৃষির উন্নয়নের জন্য সমবায় প্রয়োজন। ছাত্ররা গ্রামে সেবা সমিতি ও সমবায় গঠন করে কৃষকদেরকে কৃষি ব্যবস্থা সম্পর্কিত জ্ঞান দান করে দেশের কৃষি উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে দেশে অধিক ফসল উৎপাদন সম্ভব হবে।
শিল্পের উন্নয়ন
গ্রামের কুটির শিল্পের উন্নয়ন ও অন্যান্য বৃহদায়তন শিল্প গড়ে তোলার জন্য ছাত্ররা বিভিন্ন পল্লী অঞ্চলে বক্তৃতা বিবৃতির মাধ্যমে শিল্প সম্বন্ধে আগ্রহ জন্মাতে পারে। এতে শিল্পে বিনিয়োগের সম্ভাবনা বাড়বে এবং কারখানার উৎপাদনও বাড়বে। তাছাড়া কুটির শিল্পের উন্নতির ফলে গ্রামের মানুষ দুই পয়সা আয় করতে পারবে। এতে গ্রামের সার্বিক মঙ্গল সাধিত হবে।
স্বাস্থ্য উন্নয়ন
স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে কোন জাতিই টিকে থাকতে পারে না। পল্লী স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন করে পল্লীর দুর্দশা গ্রস্থ মানুষের জীবনে ছাত্ররা চিকিৎসার সুফল পৌঁছে দিতে পারে। ছাত্ররা টিকা, ইনজেকশন ও ঔষধ-পথ্য সংগ্রহ করে রুগ্ন জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে পারে। অনেক পল্লী অঞ্চল জঙ্গলের সমাকীর্ণ। ছাত্ররা ছুটির সময় সেগুলো পরিষ্কার করে এবং স্বাস্থ্যবিধির সম্বন্ধে জ্ঞান দান করে গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি বিধান করতে পারে।
সুষম গ্রাম উন্নয়ন
কৃষি শিক্ষা, স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রভৃতি উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামবাসীকে চিরন্তন কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস এর নাগপাশ থেকে মুক্ত করে আধুনিক জীবন সৃষ্টিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সেই সাথে মানুষকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি তাদের অধিকার সম্পর্কেও সচেতন করে তুলতে হবে। এর প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান ও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সাধিত হলেই গ্রামের সুষম উন্নয়ন সাধিত হবে। গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সমবায় আন্দোলন, ক্ষুদ্র ঋণ প্রাপ্তি ও স্বকর্মসংস্থানের বিষয়ে ছাত্ররা যথাযথ পথনির্দেশ করতে পারে।
উপসংহার
একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ঐকান্তিক নিষ্ঠা, নিঃস্বার্থ সেবা ও অক্লান্ত কর্মক্ষমতা দরকার। গ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগও গ্রহণ করতে হবে। কারণ, গ্রামের উন্নয়নের উপর সমগ্র দেশের উন্নয়ন নির্ভরশীল। তাই আমাদের মত অনুন্নত দেশের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের একটি বিরাট অংশ ছাত্রসমাজ গ্রাম উন্নয়নের কাজে অংশগ্রহণ করে জাতীয় জীবনে আলোর দিশারির ভূমিকা পালন করতে পারে। ইংরেজ কবি George Ovwell বলেন-
"students are the strength,
students are the hope,
students are the prosperity,
students are the beauty".
Post a Comment for "প্রবন্ধ রচনা: দেশ গঠনে ছাত্র সমাজের ভূমিকা।"