প্রবন্ধ রচনা: সন্ত্রাস দমনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা।
সন্ত্রাস দমনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা।
অথবা,
সন্ত্রাস দমন ও ছাত্রসমাজ।
সন্ত্রাস দমনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা |
ভূমিকাঃ
মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ছাত্র জীবন। ছাত্র জীবনই জীবনকে গড়ে তোলার প্রকৃষ্ট সময়। দেশ গঠন ও সংস্কার এবং দেশকে উন্নতির পথে নিয়ে যাওয়ার যে সাধনা, পরিশ্রম ও উদ্যোগ, তার বীজ উপ্ত হয় ছাত্র জীবনে। ছাত্র জীবন ভবিষ্যৎ জীবন গড়ার মোক্ষম সময় হলেও দেশ ও সমাজ গঠনেও ছাত্রদের ভূমিকা কম নয়। ছাত্ররা যেহেতু তারুণ্য ও যৌবনের অধিকারী সেহেতু তারা অপরিসীম শক্তিরও অধিকারী। তাই তারা সমাজের দুষ্ট ক্ষত গুলোকে চিহ্নিত করে সেগুলো প্রতিরোধ করতেও সক্ষম।
ছাত্র সমাজের দুষ্ট ক্ষত সন্ত্রাসঃ
ছাত্রসমাজ তথা শিক্ষাঙ্গনের একটি সর্বনাশা ক্ষত হলো সন্ত্রাস। সন্ত্রাসকে যদি এক প্রকার ভাইরাস বলা যায়, তাহলে ছাত্রসমাজকে বলা যায় এ বিস্তারের উপযুক্ত বাহক। সাম্প্রতিককালে দেশের শিক্ষাঙ্গনের সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে। অধ্যায়নের যেখানে ছাত্রদের তপস্যা হওয়ার কথা, সেখানে চলছে দখল আর আধিপত্য বিস্তারের দৌডদন্ড প্রতাপ। বইয়ের পাতায় যেখানে দৃষ্টি নিবন্ধন থাকার কথা সেখানে চোখে পড়ে হিংস্র হায়েনার নির্মম থাবা। সতীর্থদের মধ্য যেখানে হৃদয় জুড়ে সৌহার্দের উষ্ণতা থাকার কথা, সেখানে ত্যাগ করা হয় মরণাস্ত্র। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এখন কথা বলা হয় মুখের ভাষায় নয়, অস্ত্রের ভাষায়। শিক্ষাঙ্গনে পেশীশক্তির প্রদর্শনী এখন নিত্যকার ঘটনা। সামান্য মতপার্থক্যের কারণে মরণ অস্ত্রের ব্যবহার চলে অবাধে। ছাত্রাবাস এখন লেখাপড়ার জায়গা নয় বোমা তৈরির গোপন আস্তানা। বড় বড় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় কতিপয় ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসী জিম্মি করে রেখেছে শিক্ষাঙ্গন এবং পুরোছাত্র সমাজকে।
ছাত্র সমাজের সন্ত্রাসের প্রভাবঃ
সন্ত্রাস দেশ ও পুরো সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ হলেও শিক্ষা ব্যবস্থায় তথা ছাত্রসমাজে এর প্রভাব প্রতিনিয়ত সর্বনাশ ডেকে আনছে। এর প্রভাবে বহু মেধাবির সাথে জীবনে নেমে আসছে ভয়াবহ পরিণতি। সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীর মৃত্যু কিংবা আহত হওয়ার ঘটনা এখন নিত্যকার। আর অপঘাতে মৃত্যুর ঘটনা যেন স্বাভাবিক। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদের লেখাপড়া শিকেএ উঠে। অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে বা লেখাপড়া বিঘ্নিত হলে শিক্ষার্থীরা বিপথগামী হয়। তারা কোমল হাতে কলমের পরিবর্তে তুলে নেয় মরণ অস্ত্র। তখন সন্ত্রাস আর কেবল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই সীমাবদ্ধ থাকে না ছড়িয়ে পড়ে শহরে, বন্দরে, সমাজের সর্বস্তরে।
সন্ত্রাস দমনে ছাত্রদের ভূমিকাঃ
সন্ত্রাস আজ কেবল শিক্ষাঙ্গনেই নয় সমাজের প্রতিটি স্তরেই তা বিস্তার লাভ করেছে। এর কুপ্রভাবে জীবন হয়ে উঠেছে নিরাপত্তাহীন, মানুষ হয়ে উঠেছে অতিষ্ঠ। সন্ত্রাস প্রতিরোধ বা নির্মূল করা আজ সময়ের দাবি। অন্যান্য জাতীয় সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ছাত্রদের ভূমিকার ন্যায্য সন্ত্রাস দমনেও তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। যেখানে সন্ত্রাস সেখানেই প্রতিরোধ এর স্লোগান নিয়ে ছাত্ররা যদি এগিয়ে আসে এবং তারা নিজেরা যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকে তাহলে সন্ত্রাস দমন করা অনেকটা সহজ হবে। সেই সাথে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকেও দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত রাখার কাজে ন্যস্ত করতে হবে। তবে এ ব্যাপারে সরকারের প্রচলিত আইন অনুসারেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রাজনীতিমুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়াঃ
আমাদের দেশে ছাত্র সমাজ শুধু রাজনীতি সচেতনই নয় তারা রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ছাত্ররা রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সভার সমাবেশে তারাই প্রাধান্য বিস্তার করে। মিছিল মিটিংয়ে তাদেরই কণ্ঠস্বর উচ্চারিত হয়। অনেক ছাত্র অনেক সময় রাজনীতির লেজুরবৃত্তি করতে গিয়ে জীবনের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। তারা রাজনৈতিক দলাদলিতে প্রলুদ্ধ হয়, অস্ত্র লাভ করে, বিদ্বেষের বীজ বুকে নিয়ে সন্ত্রাসে উদ্বুদ্ধ হয়। তাই সমাজকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হলে আগে শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। আর শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হলে তাদেরকে রাজনীতিমুক্ত করতে ছাত্রদেরকে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে।
সন্ত্রাস বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়াঃ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেকোনো ছাত্র আন্দোলনের সফলতা অর্জন করে। কারণ ছাত্র আন্দোলন সফল হয়নি এমন ঘটনা বিরল। আমাদের দেশে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন, উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং ২০২৪ এর কৌটা আন্দোলন এর জ্বলন্ত উদাহরণ। তাই বর্তমান কালের কঠিন সমস্যা সন্ত্রাসের মোকাবেলায় সন্ত্রাসবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে তোলা আবশ্যক। সকল ছাত্রের স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণ থাকলে অচিরেই দেশ থেকে সন্ত্রাস দূর করা সম্ভব হবে বলে সুধীজনের ধারণা।
সন্ত্রাসী আগ্রাসন রোধে ছাত্র সমাজের অংশগ্রহণঃ
দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বলয় থেকে সর্বাগ্রে ছাত্র সমাজকে বেরিয়ে আসতে হবে। অতঃপর সন্ত্রাসী আগ্রাসন রোধে তাদেরকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। জাতীয় জীবনে সন্ত্রাসের যে কালো ছায়া অভিশাপ বয়ে এনেছে তা থেকে রেহাই পেতে অবশ্যই ছাত্রদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। যে সংগ্রামের পর এই দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ লাভের সুযোগ পেয়েছে তা সন্ত্রাসী তৎপরতার কারণে ব্যাহত হতে দিলে ছাত্রদের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হবে। দেশের মানুষ যদি জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে তাহলে জাতীয় জীবনে অগ্রগতির সম্ভাবনা দূর হবে। অগণিত ছাত্রের রক্তে গড়া স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ আবার অন্ধকারে নিপতিত হবে। তাই সন্ত্রাসী আগ্রাসন প্রতিরোধ করতে এবং নাগরিক জীবনকে সন্ত্রাসমুক্ত করার সংগ্রামে আদর্শবান ছাত্রদেরকে এগিয়ে আসতে হবে।
শিক্ষাঙ্গন থেকে সন্ত্রাস দূরীকরণঃ
সন্ত্রাস দমনে ছাত্রদের ভূমিকা পাকাপোক্ত করতে হলে আগে শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হবে। শিক্ষাঙ্গন থেকে সন্ত্রাস বিদূরিত করতে না পারলে জাতির সর্বনাশের পথ রোধ করা যাবে না। এজন্য প্রয়োজনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে এবং পাঠ্য বইয়ের সন্ত্রাসের কুফল এর দিকগুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণদার ছাত্রদেরকে রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে, কিন্তু লেখাপড়া অবস্থায় তারা প্রত্যেক্ষ রাজনীতিকে জড়িত হতে পারবেনা।
উপসংহারঃ
দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বহু সংগ্রাম আর ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে। তাই সন্ত্রাসের কারণে এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ধারা যেন নস্যাৎ হতে না পারে সেজন্য ছাত্রসমাজকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। এদেশে ছাত্র সমাজের অতীত গৌরবের কথা বিস্মৃত হলে চলবে না। শিক্ষা লাভের পাশাপাশি নিরাপদ দেশ গড়ার পরোক্ষ সংগ্রামে ছাত্রদেরকে সম্পৃক্ত হতে হবে এবং এর জন্য তাদের সংশোধন হওয়া সবচেয়ে জরুরী।
Post a Comment for "প্রবন্ধ রচনা: সন্ত্রাস দমনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা।"