বাংলা অনুচ্ছেদ "সুয়েজ খাল" এবং ডুরাল্ড লাইন।

আমরা জানি একটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে কখনোই মনের ভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করা যায় না। তাই মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য অর্থ যুক্ত কয়েকটি শব্দকে একের পর এক সাজিয়ে একটি বাক্য তৈরি করা হয়। ঠিক একইভাবে এইরকম কয়েকটি বাক্যের সমন্বয়ে কোন একটি নির্দিষ্ট শব্দের অর্থকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করাকে অনুচ্ছেদ বা প্যারাগ্রাফ বলে। প্রিয় পাঠক, আজ আমরা জানবো এমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাংলা অনুচ্ছেদ বা প্যারাগ্রাফ সম্পর্কে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-

বাংলা অনুচ্ছেদ "সুয়েজ খাল" এবং ডুরাল্ড লাইন

বাংলা অনুচ্ছেদ "সুয়েজ খাল"
বাংলা অনুচ্ছেদ "সুয়েজ খাল" এবং ডুরাল্ড লাইন

শাখালীন দ্বীপপুঞ্জ 

জাপান সাগরে অবস্থিত শাখালীন দ্বীপপুঞ্জ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি সামরিক ঘাঁটি। বর্তমানে এটি রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত। দ্বীপটির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জাপান ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। দুই পরাশক্তির মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধের যুগে এ দ্বীপটির কৌশলগত ও সামরিক গুরুত্ব ছিল অনেক বেশি। স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে রাশিয়া এখানে তার নৌঘাটি স্থাপন করে। ১৯৮৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ার একটি যাত্রীবাহী বিমান এই দ্বীপপুঞ্জ অতিক্রম করলে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন এই ঘাঁটি থেকে মিসাইল নিক্ষেপ করে। ফলে বিমানের ২৬৯ জন যাত্রী সকলেই নিহত হয়। রাশিয়া গুপ্তচর বৃত্তির অভিযোগে এই মিসাইল আক্রমণ চালায়। এদিকে জাপান এই দ্বীপটি দখল নিয়ে রাশিয়ার সাথে বিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো এর সুষ্ঠু নিষ্পত্তি সম্ভব হয়নি। 


পক প্রণালী 

পক প্রণালী বিশাল ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরকে সংযুক্ত করেছে এবং শ্রীলঙ্কাকে ভারত থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। এই প্রণালীর মাধ্যমে আরব সাগর তথা দূরপ্রাচ্য ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে বঙ্গোপসাগরে অতি সহজে প্রবেশ করা যায় এবং ভারত থেকে অনায়াসে এর মাধ্যমে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছানো যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে এই পক প্রণালীর গুরুত্ব অনেক বেশি। আমেরিকা, ইউরোপ, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাণিজ্যিক জাহাজ সহজে চলাচল করতে পারে এই পক প্রণালীর মাধ্যমে। প্রাচীনকালেও আরব বণিকগণ এ প্রণালীর ভেতর দিয়ে তাদের পণ্যবাহী জাহাজ নিয়ে ভারত বর্ষ ও মশলার দ্বীপ সমূহ আগমন করতো এবং এই অঞ্চলকে বিশ্বের সাথে সংযুক্ত করেছে। বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের সাথে এই প্রণালীর মাধ্যমে শ্রীলংকার যোগাযোগ ঘনিষ্ঠতর হয়েছে, ফলে শ্রীলংকার তামিল বিচ্ছিন্নবাদী গ্রুপ এর মাধ্যমে তামিলনাড়ু রাজ্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষা ও বিভিন্ন সাহায্য লাভ করে থাকে।


সুবিক-বে 

দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত সাবেক মার্কিন নৌ ঘাঁটির নাম সুবিক-বে। বর্তমানে এটি ফিলিপাইনের নিয়ন্ত্রণা দিন। বহু বছর যাবৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখানে তাদের নৌঘাটি স্থাপন করে এতদঅঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছিল। ১৯৯২ সালে ফিলিপাইনের জাতীয়বাদী জাগরণের ফলশ্রুতিতে আমেরিকা এই ঘাঁটি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু বর্তমানে চীনের আগ্রাসী নীতির কারণে দক্ষিণ চীন সাগরে আমেরিকা নৌশক্তি বৃদ্ধির জন্য আবার ঘাঁটিটি ব্যবহার করতে চাইছে। ইতোমধ্য ফিলিপাইনের সরকার তাদের নৌঘাটি হিসেবে সুবিক-বে কে গড়ে তুলেছে এবং চীনের আগ্রাসন ঠেকানোর জন্য পুনরায় আমেরিকাকে নৌঘাটি নয়, বন্দর হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। মূলত সুবিক-বের ভৌগোলিক গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার মধ্যস্থলে অবস্থিত এই ঘাঁটি থেকে সমগ্র দক্ষিণ চীন এই স্ট্রটলি দ্বীপপুঞ্জসহ চীন সাগরের উপরে নজর রাখা যায়। তাই ফিলিপাইন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই চীনের আধিপত্য খর্ব করার জন্য এই ঘাঁটি ব্যবহার করতে এত আগ্রহী। 


সুয়েজ খাল  

মিশরে অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম জাহাজ চলাচলের উপযোগী কৃত্রিম খালটির নাম সুয়েজ খাল। খালটি উত্তর ভূমধ্যসাগরের সাথে দক্ষিণে লোহিত সাগরকে যুক্ত করেছে। সুয়েজ খালের একপাশে পোর্ট সৈয়দ এবং অন্য পাশে সুয়েজ বন্দর। খালটির দৈর্ঘ্য ১৬২ কিলোমিটার প্রস্থ ৫৯ মিটার এবং গভীরতা ১০ মিটার। সুয়েজ খাল অতিক্রম করতে সময় লাগে প্রায় ১২ থেকে ১৫ ঘন্টা। ১৮৫৯ সালে এর খনন কাজ শুরু হয় এবং ১৮৬৯ সালে ফরাসি ইঞ্জিনিয়ার ফার্ডিন্যান্স ডি লেসেপস এটি উদ্বোধন করেন। এই খাল খননে খরচ হয় ২ কোটি পাউন্ড। এটি খননের ফলে পশ্চিম ইউরোপ, এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বাণিজ্যিক সুবিধা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫৬ সালে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জামাল আব্দুল নাসের খালটি জাতীয়করণ করলে ইঙ্গ-মার্কিন ও ইসরাইলের সাথে মিশরের যুদ্ধ লেগে যায়। ১৯৬৭ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধের ফলে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এ খালটির পথ বন্ধ ছিল। সুয়েজ খাল কৌশলগত দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

কারণ এ খাল বন্ধ থাকলে জাহাজগুলো উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে চলাচল করতে হয়। সুয়েজ খালের কারণে গ্রেট ব্রিটেন ও ভারতের মধ্যে প্রায় ৭ হাজার কিলোমিটার পথ হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য বর্তমানে তেলবাহী সুপার ট্যাংক গুলোর গভীরতা ও প্রশস্ততার ফলে এই খাল দিয়ে সকল সময় যাতায়াত করা সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। বর্তমানে এই খালটি সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ নামক একটি সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীনে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে এই খালের মালিকানা মিশরের। 


ডুরান্ড লাইন 

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যকার চিহ্নিত সীমারেখা কে বলা হয় ডুরাল্ড লাইন। স্যার মোটিমার ডোরাল্ড কর্তৃক ১৮৯৬ সালে ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে এই সীমারেখা চিহ্নিত করা হয়। ডোরাল লাইনের একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত রয়েছে। ১৮৯৩ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার পাক আফগানিস্তান সীমানা নির্ধারণ করার জন্য স্যার ডুরাল্ড এর নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেন। এই কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ১৮৯৫ সালে ব্রিটেন ও আফগানিস্তানের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং চুক্তি অনুসারে ডুরাল্ড লাইনের 'পশতুন উপজাতি' অধ্যুষিত অঞ্চল গুলো ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয় আর অন্য অংশ আফগান সরকারের শাসন অধীনে থেকে যায়। পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পাকিস্তান ডুরান্ড লাইন বরাবর সীমান্তের উত্তরাধিকার লাভ করে এবং এখনো এটি দেশ দুটির মধ্যকার সীমারেখা হিসেবে চিহ্নিত। তবে ১৯৪৯ সালে আফগানিস্তানের জাতীয় পরিষদ এই সীমারেখার ন্যায্যতা অস্বীকার করে এবং এখনো আফগান সরকার তা অস্বীকার করে আসছে। পাকিস্তান অবশ্য এই রেখাকে মেনে নিয়েছে। 


সেন্ট হেলেনা 

১৮১৫ সালে বেলজিয়ামের ওয়াটারলুর যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর নেপোলিয়ন বোনাপার্ট কে সেন্ট হেলেনা দ্বীপ নির্বাসিত করা হয়েছিল এবং ১৮২১ সালে এখানেই তার মৃত্যু ঘটেছিল বলে এটি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে। সেন্ট হেলেনা আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ। 'জেমস টাউন' এই দ্বীপের রাজধানী। আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে এটি ১২০০ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। সেন্ট হেলেনা দ্বীপের আয়তন মাত্র ৪৭ বর্গমাইল এবং এর লোক সংখ্যা প্রায় ৫০০০। এটি একটি ব্রিটিশ উপনিবেশ। 


স্বর্ণ মন্দির 

শিখ ধর্মালম্বীদের নিকট সবচেয়ে পবিত্রতম ও প্রার্থনা কেন্দ্র হল স্বর্ণ মন্দির। এটি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসরে অবস্থিত। ১৯৮৪ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শিকদের স্বাধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শিখদের এই মন্দির আক্রমণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সময় কয়েকজন বিদ্রোহী শিখ, এই ধর্ম মন্দিরে আশ্রয় গ্রহণ করলে সেনাবাহিনী এই মন্দিরের ব্যাপক ধ্বংস সাধন এবং মন্দিরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ইন্দিরা গান্ধীর দুজন শিখ ধর্মালম্বী দেহরক্ষী তাকে ১৯৮৪ সালের ৩০ অক্টোবর গুলি করে হত্যা করে। শিখেরা স্বর্ণ মন্দিরে নিয়মিত প্রার্থনা ছাড়াও বছরের নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ জমায়েত ও প্রার্থনায় শরিক হয়। 


ম্যাকমোহন লাইন 

ভারতের ৭০০ মাইলব্যাপী অরুণাচল প্রদেশ এবং তিব্বতের স্মরণ সিঁড়ি, সিয়াং ও লোহিত সীমান্ত জুড়ে অবস্থিত ম্যাকমোহন লাইন। স্যার ম্যাকমোহন কর্তৃক ১৯১৪ সালে ভারত তীব্র চুক্তির আওতায় তিব্বত ও ভারতের মধ্যে সীমারেখা চিহ্নিত হয় বলে এটি ম্যাকমোহন লাইন নামে পরিচিত। বর্তমানে ভারত এই লাইনকে ভারত-চীন সীমানা বলে গণ্য করেছে, কিন্তু চীন এখনো এই আন্ত সীমারেখা স্বীকার করে না। ফলে দীর্ঘদিন এই অঞ্চল নিয়ে ভারতের সাথে চীনের দ্বন্দ্ব চলে আসছে এবং চীন অরুণাচল প্রদেশকে ভারতের রাজ্য হিসেবে মেনে নিতে চায়নি। তবে এখন অরুণাচল প্রদেশ ভারতের অন্যতম একটি প্রদেশ রূপে স্বীকৃতি পেয়েছে। 


ম্যাজিনো লাইন  

ম্যাজিনো লাইন নির্মাণ করে তৎকালীন ফ্রান্স সরকার। জার্মান এবং ফ্রান্সের সীমান্তে ম্যাজিনো লাইনটি অবস্থিত। এটি মূলত একটি সুরক্ষিত ইলেকট্রিক বেষ্টনী। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিরা এই লাইন পর্যন্ত পশ্চাৎ প্রসারণ করেছিল। এটি তৈরির উদ্দেশ্য ছিল জার্মানিদের কাছ থেকে ফ্রান্সকে রক্ষা করা। 

পরিশেষেঃ




Next Post Previous Post