টিকা লিখুন জিনজিয়াং এবং জিব্রাল্টার প্রণালী
হেলো ভিউয়ারস কেমন আছেন সবাই? আশাকরি সবাই ভালো আছেন। প্রিয় পাঠক আপনি যদি একটা জিনিস লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে যেকোনো ইন্টারভিউ কিংবা পরীক্ষায় ছোট ছোট কিছু টিকা বা প্যারাগ্রাফ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, আসলে যে সকল টিকা বা প্যারাগ্রাফ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয় সেগুলোর উত্তর সর্বোচ্চ চার পাঁচ লাইন কিংবা ১০ লাইনের ভেতরে। কিন্তু আমরা অনেক সময় এই ধরনের টিকার প্রশ্নগুলো সম্পর্কে অবগত না থাকার কারণে সঠিক উত্তর দিতে ব্যর্থ হই।
তাই আজ আমি আপনাদের কাছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিকা সম্পর্কে আলোচনা করবো। আজকের এই টিকা প্রশ্ন উত্তরগুলো আপনাদের যে সকল ক্ষেত্রে কাজে লাগবে তা হলোঃ চাকরির ইন্টারভিউ, প্রাথমিক শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ইন্টারভিউ, বিসিএস প্রিলিমিনারি সহো অন্যান্য পরীক্ষাগুলোতেও প্রায় দেখা যায় এই ধরনের টিকা প্রশ্ন। তাই চলুন আজ আলোচনা করা যাক এমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিকা সম্পর্কে।
গাজা, জেরুজালেম, জেরিকো, চারার-ই-শরীফ, জিনজিয়াং, গোলান মালভূমি, ইউরো ট্যানেল বা চ্যানেল, জিব্রাল্টার প্রণালী ইত্যাদি |
টিকা লিখুন জিনজিয়াং এবং জিব্রাল্টার প্রণালী
গাজা
বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের আলোচিত ঘটনাগুলির মধ্যে গাজা একটি অন্যতম আলোচিত স্থান। ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরবর্তী এই এলাকাটি দখল করে নেয়। এটি মূলত সিনাই ও ইসরাইলের মধ্যবর্তী ভূমধ্যসাগর উপকূলে অবস্থিত।এর আয়তন প্রায় ৩৬৩ বর্গ কিলোমিটার এবং লোক সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ এবং ১১ লাখই ফিলিস্তিনি মুসলমান। ১৯৯৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পিএলও ইসরাইল শান্তি চুক্তি মোতাবেক অধিকৃত গাজা ও পশ্চিম তিরস্থ জেরিকো শহরকে ফিলিস্তিনের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। অতঃপর ১৯৯৪ সালের ১৯ মে পি এল ও চেয়ারম্যান ইয়াসির আরাফাত গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলের শাসনের অবসান ঘোষণা করেছেন। বর্তমানে গাজা রাজনৈতিক দিক থেকে অনেকটা অশান্ত।
জেরুজালেম
মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদিদের পবিত্রতম স্থানের নাম জেরুজালেম। বর্তমানে জেরুজালেম ইহুদিদের দখলে রয়েছে। ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব অনুযায়ী জেরুজালেমকে একটি আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণে রাখার কথা থাকলেও ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র ঘোষণা সময় এর পশ্চিমাংশ ইসরাইলের অঙ্গীভূত হয় এবং ১৯৬৭ সালে আরব ইসরাইল যুদ্ধের সময় পূর্ব জেরুজালেম কেউ ইসরাইল দখল করে নেয়। অতঃপর ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে জেরুজালেমকে ইসরাইলের স্থায়ী রাজধানী ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে জেরুজালেমে ইহুদি লোক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার। এদিকে পিএলও জেরুজালেমকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে বদ্ধপরিকর এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজধানী হিসেবে মনে করে। ফলে এটি একটি বিতর্কিত বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।
জেরিকো শহর
জেরিকো জর্ডান নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ শহর। এটির আয়তন প্রায় ৬০ বর্গ কিলোমিটার। মোট ২৫ হাজার ফিলিস্তিনির মধ্যে ১৪ হাজার লোক বাস করে এ শহরে। এদের ভাষা আরবি। জেরিকো শহরের মোট লোকসংখ্যার ৯৫% সুন্নি মুসলমান এবং ৫% খ্রিস্টান। এদের প্রধান আয়ের উৎস খাবার দ্রব্যাদি ও পর্যটন কেন্দ্র। ১৯৯৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পি এল ও স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত চুক্তির মাধ্যমে এ জেরিকো শহর ও গাজা অঞ্চল নিয়ে ফিলিস্তিনি স্বায়ত্তশাসিত আবাসভূমি গড়ে ওঠে।
চারার ই শরিফ
মুসলমানদের ঘটনাবহুল একটি ঐতিহাসিক মসজিদ চারার ই শরীফ। এ মসজিদটি ভারতের কাশ্মীর রাজ্য অবস্থিত। ১৫ শতকে এটি নির্মিত হয়।চারার-ই-শরিফ মসজিদের পাশেই রয়েছে ইসলাম প্রচারক ও সুফি দরবেশ শেখ নুরুদ্দিন ওয়ালী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর মাজার শরীফ। এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো এ মসজিদ সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। দ্বিতল বিশিষ্ট মসজিদটি কাশ্মীরের নিকট অত্যন্ত পবিত্রতার প্রতীক। কিন্তু ১৯৯৫ সালের মে মাসে মসজিদটিতে কাশ্মীরের জঙ্গি মুজাহিদ গেরিলারা আশ্রয় নিলে ভারতীয় সশস্ত্র সেনাবাহিনী সেখানে আক্রমণ চালায়। তারা মসজিদটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং জঙ্গি মুজাহিদের উপর গুলি বর্ষণ করে। ফলে মসজিদ ও মাজারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয় ও কয়েকজন জঙ্গি মুজাহিদ শহীদ হয়। মসজিদ ও পার্শ্ববর্তী প্রায় ১৩ শতক দোকান বাড়িঘর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ঘটনা নিয়ে কাশ্মীর সহ মুসলিম দেশসমূহের মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক কোভিদ সৃষ্টি হয়।
জিনজিয়াং
চীনের পূর্বাঞ্চলের ১ কোটি ৬০ লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকার নাম জিনজিয়াং। জিনজিয়াং প্রদেশের আয়তন ১৬ লক্ষ ৪৬হাজার ৮ শত কিলোমিটার। জনসংখ্যার ৬২ শতাংশই মুসলমান। মুসলমানদের মধ্যে বেশিরভাগই 'উইখ' বাকি মুসলমানরা হলো 'কাজাখী' ও উজবেক বংশদূত। বাকি ৩৮ শতাংশ হলো 'হ্যান' চীনা। অধিকাংশ লোকের ভাষা হল তুর্কি। জিনজিয়াং প্রদেশটি বহুদিন তুর্কির অধীনে ছিল। তুর্কি সালতানাতের পতনের যুগে ১৯৪০ এর দশকে ১ গৃহবিবাদের সময় চীনারা মুসলিম ভূখণ্ড জিনজিয়াং দখল করে নেয়। এর কয়েক বছর পর চীনের সাথে জাপানের যুদ্ধের সুবিধা গ্রহণ করে এই প্রদেশের মুসলিম নেতারা পূর্ব তুর্কিস্তান প্রজাতন্ত্র নাম দিয়ে আধা স্বাধীনতা ঘোষণা করে। এই সময় তারা একটি জাতীয় সংগীত ও চাঁদ তারা খচিত একটি জাতীয় পতাকা তৈরি করে। কিন্তু ১৯৫০ সালে চীনের গণমুক্তি ফৌজ জিনজিয়াং এ প্রবেশ করে এদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়। তারপর ১৯৬৬ থেকে ৭৬ দশকে চীনা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় ধর্মবিরোধী অভিযান পরিচালনা কালে বহু মসজিদ বন্ধ ও ধ্বংস করে দেয়া হয়। সকল ধর্মীয় তৎপরতা নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৭৮ সালে এসে ধর্মীয় গ্রুপগুলোর উপর থেকে করাকরি কিছুটা শিথিল করা হয়। ১৯৯০ সালে স্বাধীনতার দাবিতে গণজাগরণ দেখা দিলে চীনা সৈন্যরা ৫০ জনকে হত্যা করে আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করে। গত ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ তারিখে স্বাধীনতাপন্থী হওয়ার দায়ে ২০০ জন উইখ মুসলমানকে চীনা সৈন্যরা গ্রেফতার করলে এদের মুক্তির দাবিতে ৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি উইখ তরুণ গ্রুপ সমবেত হলে চীনা সৈন্যরা তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষে ১ হাজার লোক নিহত হয়। গত প্রায় ৫০ বছরে জিনজিয়াং প্রদেশে এত বড় গোলযোগ আর হয়নি। ওই সংঘর্ষের পর স্বাধীনতা কর্মীদের সাহায্য করার দায়ে চীন ৪ হাজার কর্মচারীকে অপসারণ, বহু কুরআন শিক্ষার স্কুল বন্ধ ও লক্ষ-লক্ষ কপি ইসলামী বই বাজেয়াপ্ত করেছে। তবে চীন এ সমস্যায় তটস্থ হয়ে কাজাখ, তাজিক, কিরগিস্তানের সাথে একটি চুক্তি করেছে যাতে স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের বিরোধিতা করার কথা বলা হয়েছে। ওই প্রদেশের মুসলমানরা চীনের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে সারা বিশ্বের কাছে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে চাচ্ছে এবং সবার সমর্থন চাইলেও তুরস্ক ছাড়া কেউ এদের সমর্থন দেয়নি। অবশ্য তুরস্ক বেসরকারিভাবে সামান্য নৈতিক সমর্থন দিয়েছে।
গোলান মালভূমি
ইসরাইল, জর্ডান ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় ঐতিহাসিক গোলান মালভূমি অবস্থিত। ১৯৬৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত এ মালভূমির মালিকানা ছিল সিরিয়ার অধিভুক্ত। ১৯৬৭ সালে তৃতীয় আরব ইসরাইল যুদ্ধে গোলান মালভূমি ইসরাইলের দখলে চলে যায়। জর্ডান নদীর তীরে অবস্থিত গোলান মালভূমি সিরিয়াকে ফেরত দেবার ব্যাপারে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে আলোচনা শুরু করেছে। এবং ইতোমধ্য বেশ কয়েকফা আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন চুক্তি না হওয়ায় গোলান মালভূমি সিরিয়া ফেরত পায়নি। আশা করা যায় শীঘ্রই এ ব্যাপারে একটা মীমাংসায় পৌঁছানো সম্ভব হবে এবং আমেরিকার মধ্যস্থতায় ইসরাইল গোলান মালভূমিকে সিরিয়াকে ফেরত দিতে বাধ্য হবে।
ইউরো ট্যানেল বা চ্যানেল
১৯৯২ সালে ১৬১ কিলোমিটার গতি সম্পন্ন যাত্রীবাহী ট্রেন ইংলিশ চ্যানেলের নীচ দিয়ে প্রথমবারের মতো ফ্রান্স থেকে ইংল্যান্ডে পৌঁছানোর মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইউরো ট্যানেল বা চ্যানেল ট্যানেল রেলপথ। এর ছয় বছর আগে ১৯৮৬ সালে এক ঘোষণার মাধ্যমে ৫০ কিলোমিটার প্রশস্ত ইংলিশ চ্যানেলের নিচ দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম রেল সুরঙ্গ ইউরো টানেল নির্মাণ অনুমোদন করেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার ও ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিতেরা। এ যৌথ অনুমোদনের পর ইউরো টানেল নির্মাণের দায়িত্ব লাভ করে ব্রিটেনের চ্যানেল বা ট্যানেল গ্রুপ ও ফ্রান্সের মানল গ্রুপ। যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচলের দুটি মূল টানেল বা লাইন সমবেত তিনটি টানেল রয়েছে এই সুরঙ্গ পথে। তৃতীয় ট্যানেলটি সার্ভিস ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সুরঙ্গ পথটিতে নির্মিত রয়েছে ১২৩০ ফুট অন্তর অন্তর তিনটি চ্যানেলকে সংযুক্তকারী ইমারজেন্সি বহির্গমন ব্যবস্থার সহ করিডোর। ট্রেনগুলো চলে বিদ্যুৎ শক্তিতে এবং এ টানেল অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ৩০ মিনিট। মাটির তলদেশ থেকে ১৩০ ফুট মাটির নিচে সমুদ্রতলের উপরিভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৩২০ ফুট নিচ দিয়ে এ ট্যানেলটি নির্মিত। বিভিন্ন দেশের পর্যটকেরা এ পথে যাতায়াত করেন এবং পথটি উপভোগ করেন।
জিব্রাল্টার প্রণালী
এটা ভূমধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগ সাধন করেছে জিব্রাল্টার প্রণালী। ভূমধ্যসাগরের পশ্চিম প্রান্তে এবং স্পেনের দক্ষিণ প্রান্তে এর অবস্থান। জিব্রাল্টার প্রণালীকে ভূমধ্যসাগরের চাবি বলা হয়ে থাকে। ভূমধ্যসাগরের প্রবেশ স্থলে এর অবস্থান। এখানে ব্রিটিশের শক্তিশালী নৌঘাটি রয়েছে। ১৯৪৫ সাল থেকে স্পেন এই প্রণালীটিকে তার নিকট ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ব্রিটেনের নিকট দাবি করে আসছে। কিন্তু ব্রিটেনের কর্তৃত্ব স্পেনকে হস্তান্তর করতে চাচ্ছে না। জিব্রাল্টার প্রণালীর সামরিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রণালীর মাধ্যমে যুদ্ধজাহাজ ও বাণিজ্য সাহায্য সহজে ভূমধ্যসাগর উপস্থিত হতে পারে এবং সেখান থেকে সুয়েজ খাল দিয়ে লোহিত সাগরে প্রবেশ করতে পারে। এ প্রণালী নৌ পথকে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত করেছে। এ প্রণালী না থাকলে উত্তর আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো জাহাজকে উত্তমাশা অন্তরীপ ঘুরে চলাচল করতে হতো।
সবশেষেঃ